আজ সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের নয়া দাবি

সজিব খান: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের সাত দফার বাহিরে নতুন একটি দাবি তুলেছে। আর তা হলো- তারা বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করেছেন। তবে তাদের এই দাবি সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১১ নেতার দ্বিতীয় দফা সংলাপ হয়। প্রায় ৩ ঘণ্টার সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সংলাপে দুই পক্ষই মন খুলে কথা বলেছে। তবে এবার সংলাপে তারা ৭ দফার বাহিরে আরো একটি নতুন দাবি তুলেছে। সংবিধান অনুসারে যখন নির্বাচন হওয়ার কথা, ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সেটির পরিবর্তে সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। আমরা কোনোভাবেই সংবিধানের বাইরে যাব না। এটা আমরা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘সংবিধান সম্মতভাবে ২৮ জানুয়ারি থেকে আগে এদিকে যে ৯০ দিন বিদায়ী সংসদ যেদিন বসছে সেদিন থেকে যে সংসদ ৫ বছর- এর আগের ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে, এটা হচ্ছে সংবিধান। কিন্তু তারা চাইছেন সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, সাত দফা দাবির বেশ কিছু দাবি মানা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্বস্ত করেছেন অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে যা করণীয়, সবই করা হবে। মন্ত্রীরা নির্বাচনের প্রচারণায় কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেবেন না।’

‘এছাড়া লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, বিদেশি পর্যবেক্ষক, রাজবন্দিদের মুক্তি এসব বিষয়ে…আমাদের নেত্রী, আমাদের দলনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনি বলেছেন, এসব দাবি মেনে নিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। শিডিউল ডিকলারের পর নির্বাচন কমিশন এগুলো করবে। এছাড়া নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। তারা যেখানেই প্রয়োজন লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহয়তায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘এখন তারা যে ৭ দফা দাবি দিয়েছে। এই ৭ দফার কিন্তু বেশির ভাগই আমাদের নেত্রী দলনেতা শেখ হাসিনা সম্মত হয়েছেন। কিন্তু তারা আজকে এমন কিছু বিষয় নিয়ে এসেছেন, যে এটাকে পরবর্তী ৯০ দিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য, হয়তো তাদের অনেকেরই সদিচ্ছা আছে। কিন্তু এটা আসলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার একটা বাহানা এবং এই পিছিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ফাঁকফোকর হয়তো খুলে দেওয়া হচ্ছে যেখান দিয়ে তৃতীয় কোনো অপশক্তি এসে ওয়ান ইলেভেনের মতো আমাদের ইতিহাসের সেই অনভিপ্রেত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে। আমরা সেটাই মনে করছি।’

এ সময় আবারও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে এরকম কোনো আলোচনার আর সুযোগ নেই বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

ঐক্যফ্রন্টের করা কী কী দাবি মেনে নিয়েছেন জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। রাজবন্দি যদি সত্যি রাজবন্দি হয় তাহলে সেটা আইনমন্ত্রী দেখবেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তা দেখভালের দায়িত্ব আইনমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন। আইনমন্ত্রীকে বলা হয়েছে, এটা তদন্ত করে যারা সত্যি রাজবন্দি তাদের মুক্তির ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে। এতে কোনো আপত্তি নাই।

এছাড়া সবার সমান অধিকার। তারা সভা-সমাবেশ করতে পারবে এ ব্যাপারে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নাই। আমাদের এমপি মন্ত্রীরাও নিজেদের এলাকায় পতাকা-গাড়ি কিছুই ব্যবহার করতে পারবে না। বিদেশি পর্যবেক্ষক এখানে অবাধে আসতে পারবে। যে কোনো কেন্দ্রে যেতে পারবে। যেভাবে তারা চান। আমাদের এখানে নির্বাচন কমিশন যেভাবে অ্যালাউ করবেন, আমাদের কোনো অসুবিধা নাই।’

তিনি বলেন, ‘আমি তো মনে করি সংলাপে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল আমাদের দলনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই কয়েকদিনের সংলাপে যা আলোচনা হয়েছে,সবকিছু মিলিয়ে আমাদের অবস্থান, আমাদের বক্তব্য এবং সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন।’

বুধবারের সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ছিলেন ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আনিসুল হক, দীপু মনি ও শ ম রেজাউল করিম। এছাড়া শরিকদের মধ্যে ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ঐক্যফ্রন্টের ১১ সদস্যের দলে ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, দলের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, দলের উপদেষ্টা এস এম আকরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।

এর আগে ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়।